চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘সিন্ডিকেট’ করে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি, ছাড়মূল্য বঞ্চিত ক্রেতা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘সিন্ডিকেট’ করে সর্বোচ্চ দামে ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে মোড়কে লেখা মূল্য পরিশোধেই বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। অথচ আগে ওষুধ ক্রয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে মূল্য ছাড় মিলতো। তবে কথিত ‘ওষুধের অনিয়ম দূরীকরণ কমিটি’ গঠন করে প্রায় দেড় বছর আগে এই মূল্য ছাড় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ক্রেতাদের অভিযোগ, জেলার ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতি অনিয়ম দূরীকরণ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দামে ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্য করছেন ব্যবসায়ীদের। অথচ আশেপাশের জেলাগুলোতে এখনও ছাড়কৃত মূল্যে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ওষুধে মূল্যছাড় দিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার কার্যকরি পরিষদের সভা ও একইসঙ্গে ওষুধের অনিয়ম দূরীকরণ কমিটির মূল্যায়ন সভা হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সব ওষুধ নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে হবে। কোনো ফার্মেসিতে ওষুধের মূল্য কম নিলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যখন কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি এ সিদ্ধান্ত নেয় তখনও জেলার সর্বত্রই ওষুধ ক্রয়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে মূল্য ছাড় পেতেন ক্রেতারা। সমিতির সিদ্ধান্তের পর জেলা উপজেলার সব ফার্মেসিতে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে ছাড় মূল্যে ওষুধ বিক্রি করলে জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তির হুশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর থেকে জেলাজুড়ে বন্ধ হয়ে যায় ওষুধের ছাড়। সংশ্লিষ্টরা জানান, নিকটবর্তী জেলা রাজশাহী ও নওগাঁতেও রয়েছে কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি শাখা। কিন্তু ওই জেলাতেই নির্ধারিত মূল্যে ওষুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ জেলার ওষুধ ক্রেতারা।

গত বুধবার শহরের বড় ইন্দার মোড়ের একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনছিলেন ইসলামপুরের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, মাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনি। কিন্তু এক টাকাও ছাড় পাই না। অথচ আমার মেয়ে রাজশাহীতে থাকে, সেখানে ওষুধ কিনলে দশ পার্সেন্ট ছাড় পাওয়া যায়। অরেক ক্রেতা ইয়াসিন আলী বলেন, ওষুধ কিনতে কিনতেই আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে। অথচ কে বোঝে কার কষ্ট। হাসপাতাল রোডে গিয়ে কথা হয় মহারাজপুর-ডোলপাড়ার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি ফার্মেসি মালিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের পর বছর ফার্মেসি মালিকরা সিন্ডিকেট করে আমাদের পকেট কাটছে। অথচ আমরা কাউকে কিছু বলতে পারছি না। রাজারামপুরের আয়েশা বেগম বলেন, আন্দোলনের পর ছাত্ররা সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ওষুধ সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা কেন করছে না।

একজন ফার্মেসি মালিক বলেন, কোন কোন ক্রেতার আর্থিক অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয় আমার। আমি যদি ছাড় দেই, দেখা যাবে আমার পাশের দোকানদার গিয়ে সমিতিতে অভিযোগ করবেন। ঝামেলা এড়াতে দুস্থ-অসহায় রোগিদেরও কোন রকম ছাড় দিতে পারি না।

জেলা কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি আহ্বায়ক মশিউর রহমান জানান, ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করেই এমআরপি অনুযায়ী ওষুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সমিতির কেন্দ্র থেকেও আমাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে বলে। তারা কোম্পানি থেকে যে কমিশন পায় সেখান থেকে আবার মূল্যছাড় দিলে কিছুই থাকে না। ব্যবসায়ীদেরও তো লাভ করতে হবে। তাই এমআরপি অনুযায়ী ওষুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাজশাহী বা নওগাঁতে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেই এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, নওগাঁয় আংশিক বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু রাজশাহীতে এখনো মূল্য ছাড় চলছে। এটা তাদের সমিতির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা তো সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক জেড এম নাহিদ নাহিয়ান জানান, নির্ধারিত মূল্যের বেশি নেওয়া যাবে না ওষুধের দাম। তবে কেউ যদি কম নিতে চায় এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বোচ্চ মূল্যে ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে অবগত আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কেমিস্টস্ অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির সিদ্ধান্ত। তারা চাইলে কিছু মূল্য ছাড় দিতেই পারে। এতে আপামর সাধারণ মানুষের উপকার হয়।

চাঁপাইবার্তা/সিসি।।