গোসল ফরজ কেন হয়, ফরজ গোসলের নিয়ম

নামাজসহ একাধিক ইবাদতের জন্য পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে ইসলাম। একাধিক আয়াত ও হাদিসে মুমিনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে জীবন-যাপনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি নাপাক (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির: ৩০৬৫)

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ-

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ তিনটি। সেগুলো হলো— ১. জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হওয়া। কেউ ঘুম থেকে ওঠার পর যদি তার কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখে, তাহলে তার স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক, উত্তেজনা অনুভব হোক বা না-হোক সর্বাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। (হেদায়া: ১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফতোয়া, পৃ-২৯)

২. স্ত্রী সহবাস করা। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। (বুখারি: ২৯১, মুসলিম: ৩৪৩)

৩. নারীদের ঋতুস্রাব বা নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) বন্ধ হওয়ার পরও গোসল ফরজ। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৬৫)

ফরজ গোসলের পদ্ধতি-

ফরজ গোসল যথাযথ না হলে পবিত্রতা অর্জন হয় না। ফলে ইবাদত বন্দেগিও শুদ্ধ হয় না। তাই ফরজ গোসলের পদ্ধতি জেনে রাখা জরুরি। গোসলের ফরজ তিনটি। যেখান থেকে একটি ছুটে গেলেও ফরজ গোসল আদায় হবে না। ১. কুলি করা। ২. নাকে পানি দেওয়া। ৩. পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো। (হেদায়া: ১/২৯)

গোসলের সুন্নত

গোসলের সুন্নতগুলো হলো—১. গোসলের নিয়ত করা। ২. বিসমিল্লাহ পড়া। ৩. দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। ৪. মেসওয়াক করা। ৫. প্রথমে অজু করা। ৬. শরীরে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে তা দূর করা। ৭. সারা দেহে তিনবার পানি ঢালা। ৮. ফরজ কাজগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। (ফতোয়ায়ে কাজিখান: ১/৭৯, রদ্দুল মুহতার: ১/১৫৬)

ফরজ গোসল যেভাবে করবেন-

গোসলের আগে ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) সেরে নেওয়া। এরপর দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করা। এবার বাঁ হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলা। তারপর অজু করা, তবে পা ধৌত করবে না। অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে, তারপর তিনবার বাঁয়ে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হেদায়া: ১/৩০)

গোসলের আদব-

উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় না করা। বসে বসে গোসল করা। লোক সমাগমের স্থানে গোসল না করা। পাক জায়গায় গোসল করা। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার: ১/৯৪)

চাঁপাইবার্তা/ডিএম।।